Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৭ অক্টোবর ২০২০

স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচী (এসএসকে) পরিচিতি

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫ (ক) অনুসারে চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। স্বাধীনতার পর থেকে, বিশেষ করে বিগত বছরগুলিতে স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সরকারী স্বাস্থ্য সেবার ব্যাপ্তি ও পরিধি সম্প্রসারিত হয়েছে, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগনের দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রাগুলির বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ইপ্সিত সাফল্য অর্জিত হয়েছে। 

 

উল্লেখ্য যে, ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচিতে দরিদ্রসীমার নীচে বসবাসরত জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য সেবাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশে গৃহিত কর্মসূচির অভিজ্ঞতা এবং দেশীয় আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে বিভিন্ন কর্মশালা/আলোচনা থেকে প্রাপ্ত মতামত/সুপারিশের আলোকে “স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (SSK)” নামে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী জনগণের জন্য এই পাইলট প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।

 

এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্যগুলো হচ্ছে:

 

(ক) দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য হাসপাতাল ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন;

(খ) দরিদ্র জনসাধারণের পকেট থেকে স্বাস্থ্য সেবায় ব্যয় হ্রাস এবং সেবা গ্রহণে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ;

(গ) স্বাস্থ্য খাতে দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য রোগী ও চিকিৎসার ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দের নিয়ম চালু করা;

(ঘ) সেবা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি; এবং

(ঙ) স্থানীয় পর্যায়ে পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব/ক্ষমতা বৃদ্ধি।

 

পাইলটিং এর প্রথম পর্যায়ে ঢাকা বিভাগের টাংগাইল জেলার কালিহাতি, মধুপুর ও ঘাটাইল-এই তিনটি উপজেলায় এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে পাইলটের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে ধাপে ধাপে এ কার্যক্রম সারা দেশে সম্প্রসারিত হবে।

 

স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির রূপরেখাঃ

 

এই কর্মসূচির অধীনে নির্দিষ্ট সূচক ব্যবহার করে পাইলট এলাকায় দরিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এসব পরিবারকে পরিবার প্রতি একটি স্বাস্থ্য কার্ড প্রদান করা হচ্ছে। এই কার্ডের ভিত্তিতে পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন এবং ৭৮টি রোগের (রোগ নির্ণয়, ঔষধ, পথ্যসহ) পূর্ণ চিকিৎসা বিনামূল্যে পাচ্ছেন। রোগীদের প্রয়োজন ও চাহিদার প্রেক্ষিতে এই রোগের তালিকা (বেনিফেট প্যাকেজ) উন্নীত করা হবে।

 

এই চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিবার প্রতি বার্ষিক ১০০০/- (এক হাজার) টাকা প্রিমিয়াম হিসাবে সরকার প্রদান করছে যার বিনিময়ে প্রতিটি পরিবার বার্ষিক সর্বোচ্চ ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা সুবিধা লাভ করবে। পাইলট চলাকালে এই প্রিমিয়ামের অর্থসহ প্রকল্পের যাবতীয় ব্যয় স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি উন্নয়ন সেক্টরের উন্নয়ন কর্মসূচি হতে সংস্থান করা হচ্ছে। পরবর্তীতে সরকারী বরাদ্দ এবং স্বচ্ছল পরিবারের নিকট থেকে প্রিমিয়াম সংগ্রহের মাধ্যমে কর্মসূচিটির অর্থায়ন করা হবে।

 

পাইলটের প্রাথমিক পর্যায়ে এই সেবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং প্রয়োজনে জেলা হাসপাতাল থেকে প্রদান করা হচ্ছে। পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে সুনির্দিষ্ট মানদন্ডের ভিত্তিতে বেসরকারী হাসপাতালকে এই কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে।

 

হাসপাতালভিত্তিক সেবা উন্নয়নে স্থানীয় কমিউনিটি ও প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ঝঝক কর্মসূচিটি মাঠপর্যায়ে বাস্থবায়নের জন্য প্রতিটি পাইলট উপজেলায় উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গদের সমন্বয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

 

পাইলট কর্মসূচি বাস্তবায়নে সম্পাদিত কাজসমূহঃ

 

(ক) চিকিৎসার ব্যয়, দরিদ্র পরিবার নির্বাচন পদ্ধতি, স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজন ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা/জরীপ পরিচালনা করে পাইলটের রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

(খ) বিদ্যমান রোগের ধরণ বিশ্লেষণ করে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে চিকিৎসা যোগ্য ৭৮টি রোগ চিকিৎসার একটি Benefit Package তৈরী করা হয়েছে এবং প্রত্যেকটি রোগের চিকিৎসার ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় Treatment Protocol তৈরী করা হয়েছে।

 

(গ) এই কর্মসূচির বাস্তবায়ন সার্বিকভাবে তত্বাবধানের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় ষ্টিয়ারিং কমিটি রয়েছে। কর্মসূচি বাস্তবায়ন সার্বিকভাবে তত্বাবধানের জন্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটে একটি স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি সেল (SSK Cell) গঠিত হয়েছে।

 

(ঘ) এছাড়া এসএসকে সেলকে সহায়তার জন্য এবং মাঠপর্যায়ে এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতির মাধ্যমে একটি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সী বা SSK স্কিম অপারেটর হিসাবে গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্স কম্পানী লিঃ-কে নিয়োগ করা হয়েছে। এই এজেন্সীর মূল কাজ হলো চিহ্নিত দরিদ্র পরিবারগুলির নিবন্ধন, SSK কার্ড ইস্যু করা, কার্ডধারী রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে সাহায্য করা এবং চিকিৎসা পরবর্তী হাসপাতালের অর্থ পরিশোধে (Claim Management-এ) সহায়তা করা।

 

 

এসএসকে সেবা প্রদান পদ্ধতিঃ

 

SSK কার্ডধারী পরিবারের-

 

(১) কোন সদস্য অসুস্থ্য হলে SSK কার্ড নিয়ে উপজেলা হাসপাতালে

 

(২) জরুরী বিভাগের পাশে অবস্থিত SSK Booth

 

(৩)-এ আসেন। SSK Booth-র সদস্যরা SSK কার্ডধারী ব্যক্তিকে বহিঃবিভাগ চিকিৎসকের

 

(৪) কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। SSK কার্ডধারী ব্যক্তির ভর্তির প্রয়োজন না হলে বহিঃবিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়ে রোগী বাড়ি চলে যান। ডাক্তারের পরামর্শে ভর্তির প্রয়োজন হলে SSK Booth-র সদস্যরা উক্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহনে সহযোগিতা এবং ভর্তির ব্যবস্থা করেন

 

(৫)। ভর্তিকৃত SSK রোগী বিনামূল্যে ঔষধ, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং অপারেশনের সুবিধা পান। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে পরিবহন খরচ

 

(৬) সহ চিকিৎসার জন্য টাংগাইল জেলা হাসপাতালে

 

(৭) পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। পরিবহন খরচ SSK কর্মসূচি থেকে বহন করা হয়।

 

 

পাইলটিং এর প্রথম পর্যায়ে বিগত ২৪ মার্চ ২০১৬ খ্রিঃ তারিখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী কালিহাতি উপজেলায় কর্মসূচি উদ্ভোধন করেন। পরবর্তী পর্যায়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ খ্রিঃ তারিখে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী কর্তৃক মধুপুর ও ঘাটাইল-এই দুইটি উপজেলায় এ কর্যক্রম সম্প্রসারিত হয়েছে।